Internet
ইন্টারনেট কি ?
এটার সংজ্ঞা যদি দিতে বলা হয়, তাহলে বলা যায় যে ইন্টারনেট হল একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক যা একাধিক কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো স্ট্যান্ডার্ড প্রোটোকল ব্যবহার করে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তথ্য অ্যাক্সেস, শেয়ার এবং বিভিন্ন অনলাইন কার্যক্রম সম্পাদন করার সুযোগ দেয়।
আরেকটু সহজ করে বললে , এটি হলো এমন একটা নেটওয়ার্ক সিস্টেম,যাতে কিছু স্টান্ডার্ড নিয়ম ফলো করে সারা বিশ্বের এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা ট্রান্সফার করা যায় ।
ইন্টারনেটের ইতিহাস
এটা একটা গল্প, যেটা শুরু হয়েছিল যুদ্ধ থেকে, আর শেষ হয় মোবাইলের স্ক্রলে… সময়টা ১৯৪০-এর দশক — দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
সেই সময় পৃথিবী রীতিমতো আগুনের গোলায়! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, রাশিয়া — সবাই লড়াই করছে বাঁচার জন্য। যুদ্ধের মাঠে শুধু গোলা-বারুদেরই লড়াই না, তথ্য বা ইনফরমেশনেরও যুদ্ধ চলছে। কে কোথায় আছে, কারা কী পরিকল্পনা করছে — এই তথ্যগুলো যত দ্রুত পৌঁছে দেওয়া যায়, ততই যুদ্ধ জেতা সম্ভব।
এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানী আর সামরিক অফিসাররা ভাবতে শুরু করলো — কিভাবে দ্রুত আর সুরক্ষিতভাবে তথ্য পাঠানো যায়? এই ভাবনা থেকেই “কম্পিউটার” নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
এ সময়ই একজন ব্রিটিশ গণিতবিদ, Alan Turing, কোড ভাঙার জন্য একটি যন্ত্র তৈরি করেন — যেটা আধুনিক কম্পিউটারের প্রথম ধারণা দেয়। যুদ্ধ জয় করার পেছনে তাঁর এই অবদান বিশাল।
১৯৫০-৬০-এর দশক: যুদ্ধ শেষ, কিন্তু আরেক যুদ্ধ শুরু...
যুদ্ধ শেষ হলেও শান্তি ফিরল না। এবার শুরু হলো ঠান্ডা যুদ্ধ (Cold War) — আমেরিকা আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। কেউ কাউকে গুলি করছে না, কিন্তু সবাই প্রস্তুত — কখন যুদ্ধ বেঁধে যায় কে জানে!
এই সময় আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তর (Department of Defense) একটা নতুন ভয় পেল — “যদি একদিন আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়? যদি ফোন লাইন কেটে যায়, সেনারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ না রাখতে পারে?”
এই চিন্তা থেকেই তারা একটা সিস্টেম বানানোর পরিকল্পনা করলো — যেখানে অনেকগুলো কম্পিউটার কানেক্ট থাকবে, আর একটা নষ্ট হলেও বাকিগুলো ঠিকঠাক চালু থাকবে।
১৯৬৯: জন্ম হলো ARPANET
এই ভয় থেকেই ARPANET নামে একটা প্রকল্প চালু হলো। এটা ছিল একধরনের নেটওয়ার্ক, যেটা প্রথমবারের মতো একাধিক কম্পিউটারকে একে অপরের সাথে কানেক্ট করতে পারলো।
১৯৬৯ সালের অক্টোবর মাসে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যানফোর্ডে একটি কম্পিউটার বার্তা পাঠায়। খুব ছোট্ট একটা বার্তা — “LOGIN”। কিন্তু যন্ত্রপাতি তখন খুব দুর্বল, তাই “LO” লেখার পরই সিস্টেম ক্র্যাশ করে যায়। তাও এটাকে ইতিহাসে প্রথম ইন্টারনেট মেসেজ ধরা হয়।
১৯৭১: পাঠানো হলো প্রথম ইমেইল
১৯৭১ সালে, Ray Tomlinson নামের একজন প্রকৌশলী ভেবেছিলেন, “এই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যদি একটা চিঠি পাঠানো যেত?” সেই ভাবনা থেকেই তিনি তৈরি করলেন ইমেইল। আর তখনই প্রথমবার @ সাইন ব্যবহার করা হয়।
১৯৮৩: TCP/IP — ইন্টারনেটের ভাষা
এতোদিন অনেক রকম পদ্ধতিতে কম্পিউটারগুলো তথ্য পাঠাতো। কেউ এক নিয়মে, কেউ আরেক নিয়মে। তাই সবাইকে এক ছাতার নিচে আনার জন্য তৈরি হলো TCP/IP Protocol।
Protocol মানে হলো, “কিভাবে তথ্য পাঠাতে হবে আর গ্রহণ করতে হবে” — এই নিয়মাবলী।
TCP/IP মানে Transmission Control Protocol/Internet Protocol। এটা হলো ইন্টারনেটের মূল ভাষা যেটা কিছু সেট অফ রুলস ডিফাইন করে দেয় যে কিভাবে একটা কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা পাঠানো যাবে। এটা সব কম্পিউটারকে একসাথে কাজ করতে সাহায্য করে। TCP/IP ছাড়া ইন্টারনেটের কোনো অস্তিত্বই হতো না।
এই TCP/IP হোল ইন্টারনেটের আসল ভাষা
১৯৯০: World Wide Web (www) — ওয়েবসাইটের জন্ম
১৯৮৯ সালে Tim Berners-Lee, একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী, CERN নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বসে ভাবছিলেন — “যদি বিভিন্ন ডকুমেন্ট একটার সাথে আরেকটা লিঙ্ক করে রাখা যেত, তাহলে তো যেকোনো তথ্য পাওয়া অনেক সহজ হতো!”
এই ভাবনা থেকেই তিনি তৈরি করলেন World Wide Web (www)। এরপর তৈরি হলো HTML, Web Browser, আর URL — আজকের আধুনিক ওয়েবসাইটের জন্ম।
১৯৯১ সালে, প্রথম ওয়েবসাইট চালু হয় — ঠিকানাটা ছিল: http://info.cern.ch (opens in a new tab)
১৯৯৫-২০০০: ইন্টারনেট ছড়িয়ে পড়লো পৃথিবীজুড়ে
এই সময় মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার বের করলো, Google তৈরি হলো, Yahoo চালু হলো। মানুষ প্রথমবার বুঝতে পারলো — “ইন্টারনেট শুধু গবেষকদের জিনিস না, এটা ঘরের ছেলে!”
বাংলাদেশে প্রায় ১৯৯৬ সালের দিকে প্রথম ইন্টারনেট সার্ভিস চালু হয়। তখন ডায়াল-আপ কানেকশন, ভয়ংকর ধীরগতি, ফোন লাইন দিয়ে ইন্টারনেট!
২০০৭-এর পর: মোবাইল ইন্টারনেট যুগ
২০০৭ সালে iPhone আসার পর ইন্টারনেট একদম পকেটে ঢুকে পড়লো। মানুষ তখন বাসে, রাস্তায়, ঘুমানোর আগেও — ইন্টারনেট ব্যবহার করা শুরু করলো।
এরপর এল 3G, 4G, 5G — আর ইন্টারনেট হলো আমাদের জীবনের একটা অংশ, যেমন পানি বা বাতাস।
আর এটা শুরু হয়েছিল একটা যুদ্ধের থেকে, একটা ভয় থেকে, একটা ‘LOGIN’ বার্তা থেকে…
TCP/IP কি?
TCP/IP (Transmission Control Protocol/Internet Protocol) হলো ইন্টারনেটের মূল ভাষা যা কম্পিউটারগুলোকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে দেয়। এটা মূলত দুটি প্রোটোকল নিয়ে গঠিত:
- TCP (Transmission Control Protocol): এটি ডাটা ট্রান্সমিশনের জন্য দায়ী। এটি ডাটা প্যাকেটগুলোকে সঠিকভাবে পাঠায় এবং গ্রহণ করে, যাতে ডাটা হারিয়ে না যায়।
- IP (Internet Protocol): এটি ডাটা প্যাকেটগুলোকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য দায়ী। এটি প্রতিটি ডাটা প্যাকেটের জন্য একটি ঠিকানা নির্ধারণ করে, যাতে প্যাকেটগুলো সঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছায়।